spot_img

বাফেটের সই করা বইয়ের দাম উঠল এক লাখ ডলার

গত সপ্তাহান্তে মার্কিন কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সভা যেন বিশাল সমাবেশে পরিণত হয়। সভার আগে ও মূল সভায় অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির কিংবদন্তি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ারেন বাফেটের সই করা স্মৃতিচিহ্ন কিনতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ‘বিনিয়োগ গুরু’খ্যাত ওয়ারেন বাফেটের স্বাক্ষরিত এসব বস্তু নিলামে বিক্রি হয়েছে। অনেকটা নীরবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে নিলাম। এতে বইয়ের দাম ওঠে সর্বোচ্চ এক লাখ মার্কিন ডলার।

এই নিলামে কেনাবেচার অর্থ যেমন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে স্থানান্তর করা হয়েছে, তেমনি ডাকযোগেও এসেছে অনেক চেক। শুধু তা–ই নয়, অনেক মানুষ হাজার হাজার ডলার খরচ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সুযোগ পেলে তাঁরাও ওই সব স্মারক কিনবেন, সেই আশায়।

পুরো বিষয়টি বাফেটের চিরাচরিত রীতিতেই হয়েছে। এই নিলামের অর্থ ও তার সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে বাফেটের জন্মস্থান ওমাহার স্থানীয় মানুষের সেবায়। ওমাহা হলো যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা রাজ্যের একটি শহর। যা–ই হোক, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণকারীরা সিক্সটি ইয়ার্স অব বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে বা বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ৬০ বছর শীর্ষক বই কেনার সুযোগ পেয়েছেন। তবে বাফেট ও লেখক ক্যারি সোভারের স্বাক্ষর করা ১৮টি কপি স্টিফেন সেন্টারের উন্নয়নে নিলামে তোলা হয়েছিল। এই আশ্রয়কেন্দ্রটি বার্কশায়ারের প্রধান কার্যালয় নেব্রাস্কা রাজ্যের ওমাহা শহরের মানুষের সেবায় নিয়োজিত।

বাফেট আগে থেকেই এ সংস্থার জন্য সংগৃহীত প্রতিটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অনুদান প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ নিলামের মাধ্যমে যত অর্থ ওঠে, তার সমপরিমাণ অর্থ তিনিও দান করেন। স্টিফেন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস নফের মতে, ৯৪ বছর বয়সী বাফেটের এই অবদানের কারণে অনুষ্ঠান থেকে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন বা ১৩ লাখ ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করা গেছে। এই সংস্থাটি আবাসন সেবা দেওয়ার পাশাপাশি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে।

ক্রিস নফ এক সাক্ষাৎকারে সিএনবিসিকে বলেন, ‘এই অবিশ্বাস্য উদারতার জন্য আমার এবং আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপযুক্ত ভাষা নেই। শুধু বলব, অসাধারণ।’

দুই ধাপে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে বৈঠকের আগে অনলাইনে আটটি বইয়ের নিলাম হয়, যেখানে সর্বোচ্চ দর ওঠে এক লাখ ডলার। এরপর শুক্র ও শনিবার ‘বার্কশায়ার বাজার অব বার্গেইনস’ অনুষ্ঠানে আরও ১০টি বইয়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। তখন দরপত্র জমা পড়ে অর্ধশতাধিক, সেদিন সর্বোচ্চ দর ওঠে ৬০ হাজার ডলার।

এরপর বাফেট যখন অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে বছরের শেষ নাগাদ বার্কশায়ারের প্রধান নির্বাহীর (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আকস্মিক ঘোষণা দেন, তখন বইটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

নফ জানান, বাফেটের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদার প্রয়াত চার্লি মাঙ্গারের বন্ধু—এমন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আরও দুটি সই করা বই আলাদা করে রাখা হয়েছিল। বাফেটের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদার মাঙ্গারের কথা এ বইয়ে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে স্টিফেন সেন্টারকে সহায়তার জন্য স্বাক্ষরিত বইয়ের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২০টিতে।

নিলামে বিজয়ীদের মধ্যে একজন ছিলেন ৪৩ বছর বয়সী ম্যাথিউ রড্রিগেজ, যিনি আবাসান খাতের একজন কর্মী। রড্রিগেজ জানান, তিনি অনলাইন নিলামের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন এবং নিলাম বন্ধ হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট আগে ৫০ হাজার ডলার দর হাঁকেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই বই আমার লাইব্রেরির জন্য অমূল্য নিদর্শন হবে।’

নফ বলেন, যে অর্থ উঠেছে তার একটি অংশ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের ঘরদোর ঠিকঠাক করতে কাজে লাগবে। বাকিটা খরচ হবে মহিলা ও শিশুদের কেন্দ্র তৈরিতে। ওমাহাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে এই সংস্থা।

বার্কশায়ারের শেয়ারহোল্ডার জে জি ছোটবেলায় তাঁর পরিবারের আর্থিক কষ্ট দেখেছিলেন। এখন তাঁর বয়স ৪৩ বছর এবং পেশায় বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক। তিনি ২০ হাজার ১৫০ ডলার দর দিয়ে একটি বই কিনেছেন। সেই সঙ্গে স্টিফেন সেন্টার সরেজমিনে ঘুরে এসেছেন তিনি। বলেন, ‘আমি তো শুধু নিজের দিক থেকে কিছুটা সাহায্য করেছি। আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের সংখ্যা যেন তেমন একটা না বাড়ে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। যখনই সুযোগ পাব, কিছু সাহায্য পাঠাব।’

স্বাক্ষর করা বইগুলোর বাইরে স্বাক্ষরবিহীন বইও অনুষ্ঠানে বিক্রি হয়েছে। বার্ষিক বৈঠকের প্রশ্নোত্তর পর্বে বাফেট বলেন, বার্কশায়ারের সভায় বইয়ের প্রায় ৮ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে।

বাফেটের দানধ্যান

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি, অর্থাৎ অতিধনী ব্যক্তিদের একজন ওয়ারেন বাফেট। তবে অন্য ধনীদের তুলনায় দানধ্যানের জন্য তিনি বেশি বিখ্যাত। ২০০৬ সাল থেকেই ওয়ারেন বাফেট তাঁর সম্পদ নানা ধরনের জনহিতকর কাজে দান করতে শুরু করেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে বাফেট সহায়তা দিচ্ছেন আগে থেকেই। এরপর দানের জন্য বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অন্য ধনীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন দ্য গিভিং প্লেজ। এ ক্ষেত্রে শর্ত দুটি। সম্পদের পরিমাণ হতে হবে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের বেশি, আর সেই সম্পদের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ দান করতে হবে। অবশ্য বিল গেটস তাঁর সম্পদের ৯৫ শতাংশ, আর ওয়ারেন বাফেট তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করার ঘোষণা দিয়েছেন আরও আগেই।

ওয়ারেন বাফেটের মৃত্যুর পর তাঁর বিপুল সম্পদের কী হবে, তা নিয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছেন। একই সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি দান অব্যাহত রাখবেন। ওয়ারেন বাফেটের যখন মৃত্যু হবে, তখন তাঁর তিন সন্তান সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, কীভাবে তাঁদের বাবার সম্পদ দান করা হবে। কিন্তু তাঁর সন্তানেরা যদি সম্পদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে কী হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট। সে ক্ষেত্রে তিনটি ট্রাস্টি তাঁর সম্পদের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হবে। সেগুলোর নাম অবশ্য তিনি উল্লেখ করেননি।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles