spot_img

যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য আলোচনায় বড় অগ্রগতি, জানালেন ট্রাম্প

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ চীনের বিপুল হারে শুল্ক আরোপ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রশমিত হয়েছে।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘সুইজারল্যান্ডে আজ চীনের সঙ্গে ভালো বৈঠক হয়েছে। অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; অনেক ক্ষেত্রেই ঐকমত্য হয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক পদ্ধতিতে পুরো বিষয়টি নতুন করে সাজানো হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কল্যাণে আমরা দেখতে চাই, মার্কিন ব্যবসার-বাণিজ্যের জন্য চীন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। বড় অগ্রগতি হয়েছে।’

গত কয়েক দিন ধরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির প্রমুখ। এই বৈঠক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, এই বৈঠক চলবে।

তবে মার্কিন অর্থমন্ত্রী গত সপ্তাহেই বলেছেন, এই বৈঠক থেকে যে বড় ধরনের চুক্তি হয়ে যাবে, এটা আশা করা ঠিক হবে না। যদিও তিনি বলেছেন, বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার পথে এটা বড় পদক্ষেপ। চীনের সহকারী প্রধানমন্ত্রী হি লিফেং চীনের পক্ষে এই আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি এই সংবাদ দিয়েছে।

অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক সমস্যা সমাধানের পথে বড় পদক্ষেপ। যদিও চূড়ান্ত সমাধান পেতে আরও ধৈর্য ধরতে হবে; সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাগবে।

২ এপ্রিল ঘোষিত ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বিশ্বের সব দেশের জন্য ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হরেও চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত আছে। এর জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত কমে যাচ্ছে।

এখন যে পরিস্থিতি, তাতে শুল্ক হার কমিয়ে এক ধাক্কায় অর্ধেক করা হলেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, শুল্কের হার ৫০ শতাংশ হলেই কেবল দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য একরকম স্বাভাবিক পর্যায়ে যেতে পারে।

শুক্রবার ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি চীনের পণ্যে শুল্কের হার ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ভাবছেন; সেই সঙ্গে শর্ত দেওয়া হবে, চীনকে বাজার খুলে দিতে হবে। ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, চীনের পণ্যে ৮০ শতাংশ শুল্ক ঠিক বলেই মনে হয়; এখন বাকিটা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের ওপর।

এদিকে ১৪৫ শতাংশ শুল্কযুক্ত চীনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আসতে শুরু করেছে, যদিও পরিমাণে কম। পরিমাণে বেশি বা কম হোক, এসব পণ্যের দাম, ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তামূল্য সূচক চলতি বছর ৪ শতাংশে উঠতে পারে। এই মুহূর্তে বাণিজ্য চুক্তি হলেও পণ্যের দাম কমবে না, কারণ ১৪৫ শতাংশ শুল্কযুক্ত ইতিমধ্যে মার্কিন বন্দের চলে এসেছে।

বাস্তবতা হলো, মার্কিনিরা যে বিপুলসংখ্যক চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল, শুধু এ কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে এসব পণ্যের প্রভাব কতটা ব্যাপক, এই কথা দিয়ে তা বোঝানো সম্ভব নয়। জুতা, পোশাক, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, মাইক্রোচিপ, শিশুদের জিনিসপত্র, খেলনা, খেলার সরঞ্জাম, অফিসের যন্ত্রাংশের মতো আরও অনেক কিছুই চীন থেকে বিপুল পরিমাণে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে।

কিন্তু এখন সেই আমদানি কমছে। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের মতে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি অন্তত ২০ শতাংশ কমবে। চীন থেকে আমদানি আরও বেশি হারে কমবে। বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান ধারণা করছে, চীন থেকে আমদানি কমবে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ।

অর্থনৈতিক প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক চীনের উৎপাদন খাতে বড় প্রভাব ফেলেছে। এপ্রিল মাসে চীনের কারখানার উৎপাদন গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে আবারও প্রণোদনা দেওয়ার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে বেইজিংয়ের সামনে।

স্কট বেসেন্ট শুক্রবার জেনেভায় গেছেন। এই খবরে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হবে, এমন আশা তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যথাক্রমে বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তারা কতটা বড় সেটা বোঝাতে বলা দরকার, পরবর্তী ২০টি অর্থনীতির সম্মিলিত জিডিপির চেয়েও তারা বড়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles