চিত্রনায়ক অমিত হাসানের অভিনয়জীবন কয়েক দশকের। এখন অবশ্য কাজ কমই করেন। তবে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট নানা আড্ডায় মুখর থাকতে দেখা যায় অমিত হাসানকে। আজ সোমবার নিজের ফেসবুকে লিখলেন, ‘শিল্পী সমিতি আছে, কিন্তু শিল্পী নাই।’ মন্তব্যের ঘরে অনেকে অনেক কিছুই লিখেছেন। এর মধ্যে চিত্রনায়ক ওমর সানী লিখেছেন, ‘একদম সত্যি, ভালো বলেছিস।’ চলচ্চিত্র শিল্পী বর্তমান নেতৃত্বে আছেন মিশা সওদাগর ও ডিপজল। কয়েক মাস ধরে কেউই দেশে নেই। সমিতির কোনো কার্যক্রমও সেভাবে দৃশ্যমান নয়।

হঠাৎ করে কেন এমনটা লিখছেন, জানতে চাইলে অমিত হাসান বললেন, ‘আমার এই পোস্ট দেওয়ার পর চলচ্চিত্রের অনেকে ফোন করেছেন। জানতে চেয়েছেন, কী হয়েছে? কেন এমনটা লিখেছি? সত্যি বলতে, এটা আমার উপলব্ধি। আমার যা মনে হয়েছে, তা–ই লিখেছি। এটা তো ঠিক, কাজ না থাকলে শিল্পী সমিতিতে কেউ গিয়ে তো আড্ডা দেবে না। সেখানে গিয়ে অকারণে বসে থাকারও তো কোনো মানে হয় না। আজ যদি শিল্পীরা ভরপুর কাজে ব্যস্ত থাকতেন, এফডিসির ফ্লোরে ফ্লোরে কাজ চলত, তাহলে শিল্পীরাও শিল্পী সমিতিতে গিয়ে আড্ডা দিতেন। বসতেন, হাসাহাসি করতেন। নিজেদের গল্প বলতেন। সেই দৃশ্য তো আমরা দেখি না। তাই আমি লিখেছি। অথচ এই শিল্পী সমিতি একটা সময় প্রকৃত শিল্পীদের পদচারণে মুখর থাকত।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ভেতরে শুটিংয়ের ফাঁকে শিল্পীদের বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ হয় একটি কক্ষ, যা পরবর্তী সময়ে শিল্পী সমিতি নামে পরিচিতি পায়। বেশ কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাইও করা হয়, যাঁরা সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক ডিপজল দুজনেই লম্বা সময় ধরে দেশের বাইরে। অমিত হাসানের কথায় সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
অমিত হাসান বললেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে এখন গ্রহণযোগ্য কোনো নেতৃত্ব নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরাও মাসের পর মাস দেশে নেই। এভাবে তো একটা সংগঠন চলতে পারে না। রাজ্জাক, আলমগীর, মান্না, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, মাহমুদ কলির মতো অভিনয়শিল্পীরা একসময় নেতৃত্বে ছিলেন। আমরা ছিলাম, শাকিব ছিল—তখন দেখতাম, আমরা শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসা থাকলে অনেক শিল্পী আসতেন, দেখা করতেন। আড্ডা দিতেন। দেখা গেল, এফডিসিতে শুটিং করছেন, এক ফাঁকে খোঁজ নিতেন, সমিতিতে কে আছেন, তারপর দেখা করতেন। বলতেন, “যাই, একটু বসে চা খেয়ে আসি। আড্ডা দিয়ে আসি।” এই জিনিসগুলোর অভাব এখন এফডিসিতে শিল্পী সমিতিতে।’
কথা প্রসঙ্গে অমিত হাসান এ–ও বললেন, ‘এফডিসিতে শিল্পীদের কাজ নেই। সেভাবে নিয়মিত ছবির শুটিংও হয় না। মূলধারার চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকেরা এখন সেভাবে ছবি বানাচ্ছেন না। যা–ও দু-একটা হয়, সেগুলোর শুটিং আবার এফডিসিতে হয় না। চার শতাধিক ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। আমি দেখছি যে আমাদের সময়ের কোনো পরিচালক ও প্রযোজক ছবি বানাচ্ছেন না। তাহলে এফডিসি মুখর থাকবে কীভাবে। আর এফডিসি মুখর না থাকলে সমিতিতেই বা আড্ডা দেবেন কারা! এর বাইরে আরও একটি কারণ হলো, দলীয়করণ, শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির কারণেও শিল্পীরা সমিতিমুখী নন। ওই যে বললাম, শেষ কয়েক বছরে সমিতিতে যোগ্য নেতৃত্বেরও অভাব আছে।’